Tuesday, July 18, 2017

Akshaya Tritiya

Akshaya Tritiya(অক্ষয় তৃতীয়া)



 সংক্ষেপে পবিত্র অক্ষয় তৃতীয়া সম্পর্কিত কিছু কথা।
বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিকেই অক্ষয় তৃতীয়া বলা হয় । হিন্দু শাস্ত্রানুসারে অক্ষয় তৃতীয়া অনন্য তাৎপর্যময় এবং পরম মাহাত্ম্যপূর্ণ তিথি। অক্ষয় শব্দের অর্থ হলো যার ক্ষয় নেই ; তাই এই মহাপবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পাদন করলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে।
(আগামী ২৯ এপ্রিল শানিবার অক্ষয় তৃতীয়া)

এ অক্ষয় তৃতীয়া সম্পর্কে শ্রীচৈতন্যের সমসাময়িক স্মার্তচূড়ামণি শ্রীরঘুনন্দন ভট্টাচার্য প্রণীত "তিথিতত্ত্বম্" গ্রন্থে যা বলা আছে তাই সংক্ষেপে সংস্কৃত শ্লোক থেকে বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তুলে ধরছি :
  • স্মৃতিতে বলা আছে - বৈশাখ মাসের শুক্লতৃতীয়া যদি কৃত্তিকা বা রোহিণীনক্ষত্র যুক্ত হয়, তবে তাকে অক্ষয় তৃতীয়া বলে। এ দিনে দান সহ যে যে পবিত্র কর্ম করা হয় তার সকল ফলই অক্ষয় হয়।
  • ভবিষ্যোত্তর পুরাণে বলা আছে - বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের যে তৃতীয়া তিথি, তা জগতে অক্ষয় নামে প্রসিদ্ধ, তাই দেবগণেরও প্রিয় এ তিথি। যে মনুষ্য এ দিনে জল ও অন্ন-সম্মিলিত কুম্ভ দান করে সে জ্যোতির্ময় সূর্যলোক প্রাপ্ত হয়।
  • ব্রহ্মপুরাণে বলা আছে - বৈশাখমাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়াতে যে ব্যক্তি চন্দনচর্চিত ভগবান শ্রীহরি বিগ্রহ দর্শন করে, সে ভগবানের পরমধামে গমন করে।
  • আরও বলা আছে - শ্রীভগবান বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়াতে সত্যযুগের অবতারণা করেন এবং খাদ্যশস্য হিসেবে যবের উৎপত্তি করেন। তাই এ দিনে যব দ্বারা ভগবানের পূজা করবে এবং ব্রাহ্মণ সহ সকলকে যব দান করবে এবং ভোজন করাবে। এদিনে পতিতপাবনী গঙ্গাও পৃথিবীতে অবতরণ করে। তাই এ দিনে মহাদেব, গঙ্গা,কৈলাস ও হিমালয় পর্বতাদির পূজা করবে এবং সাথে সাথে সগরকুলের ধুরন্ধর ভগীরথ রাজারও পূজা করবে। এ দিনে স্নান,দান, তপ,শ্রাদ্ধ এবং হোম ইত্যাদি যে যে মঙ্গলময় অনুষ্ঠান করবে, তা সকলই অক্ষয় ফল দান করবে।
  • স্কন্ধপুরাণে ভগবান বলছেন- বৈশাখমাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া অক্ষয়া নামে অভিহিত, সেই তৃতীয়াতে আমার শরীর শোভন ও সুগন্ধ লেপনদ্রব্য দ্বারা লিপ্ত করবে।
  • রঘুনন্দনের বলা ছাড়াও আরো অসংখ্য মাহাত্ম্যপূর্ণ এবং তাৎপর্যময় ঘটনার তিথি পবিত্র এ অক্ষয় তৃতীয়া :ভগবানশ্রীপরশুরাম অবতাররূপে আসেন এ দিনেই।
  • শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়নবেদব্যাস এ দিনেই মহাভারতের রচনা শুরু করেন।
  • দশমহাবিদ্যার অন্যতম দেবী ধুমাবতীর আবির্ভাব এ দিনেই।
  • সত্যযুগের শুরু এ দিন থেকেই।
  • ভারতের_উত্তরাঞ্চলীয় চারধামের অন্যতম কেদার বদরীনাথের মন্দির ছয়মাস বন্ধ থেকে এ দিনেই তার দ্বার খুলে দেয়া হয়। দ্বার খুললেই অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ দৈব অক্ষয়দীপের দর্শন হয় সকলের।
  • কুবেরের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন এদিনেই। কুবেরের লক্ষ্মী এবং অতুল ঐশ্বর্য লাভ হয়েছিলো বলে এদিনে তাই বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
  • পুরীধামে_জগন্নাথদেবের_রথযাত্রা উপলক্ষে রথ নির্মাণ এ দিন থেকেই শুরু হয় এবং আজ থেকেই থেকেই জগন্নাথদেবের ২১ দিনব্যাপী চন্দনযাত্রা উৎসবের সূচনা ঘটে।
  • সকল_দেবস্থানে বিশেষ করে বৈষ্ণবদেবস্থানে এ দিন থেকেই মহাধুমধামে চন্দনযাত্রা উদযাপিত হয়।
  • সাধকপুরুষ_রামচন্দ্রদেবের এ দিনে তিরোধান দিবস। তাই এ দিনে সারাদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ নোয়াখালীর চৌমুহনীতে স্থিত তাঁর সমাধিবেদিতে জল দান করেন।

তাই এদিনে আমরা যদি ভালো কাজ করি, তবে আমাদের অক্ষয় পূণ্য লাভ হবে পক্ষান্তরে তামসিক খারাপ কাজের ফল হবে অক্ষয় পাপের যমযন্ত্রণা । তাই এদিন খুব সাবধানে প্রতিটি কাজ করা উচিত। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে ভুলেও যেন কোনো পাপকাজ আমাদের দ্বারা না হয়ে যায়। এ দিনে ভুলেও যেন মন্দ-কটু কথা না বেরোয় আমাদের মুখ থেকে। তাই এদিন যথাসম্ভব সাত্ত্বিকভাব থাকা প্রয়োজন। আর এদিন পূজা,জপ,ধ্যান,দান,অপরের মনে আনন্দ দেয়ার মত কাজ করা উচিত। এদিনটা ভালোভাবে কাটানোর অর্থ সাধনজগতের পথে অনেকটা অনেকটা এগিয়ে ঈশ্বরের নৈকট্যলাভ । তাই পবিত্র অক্ষয়তৃতীয়ায় শ্রীভগবানের অপার করুণা আমাদের সবার পরমসঙ্গী হোক, এ শুভকামনা রেখে আমার এই লেখাটি শেষ করলাম।
লেখকঃ
শ্রী  কুশল বরন চক্রবর্তী 
সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । 
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ,বাংলাদেশ ।