Tuesday, July 18, 2017

Mother's Day

Mother's Day(মা দিবস)

মা সারদাদেবী
ইউরোপ-আমেরিকার ভাবধারানুসারী হয়ে একদিনের জন্যে মা দিবস পালন না করে ৩৬৫ দিনই মা দিবস পালন করা উচিৎ। কারণ আমাদের শাস্ত্রে বলা আছে-
উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য আচার্যাণাং শতং পিতা।

সহস্রং তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে।।
(মনুসংহিতা : ২.১৪৫)

দশজন উপাধ্যায় (যিনি জাগতিক শিক্ষা দেন) থেকে একজন আচার্য (যিনি বিনে পয়সায় বৈদিক জ্ঞান দান করেন) শ্রেষ্ঠ ; একশজন আচার্য থেকে একজন জন্মদাতা পিতা শ্রেষ্ঠ ; এবং জন্মদাত্রী মাতা পিতা থেকেও সহস্র সহস্রগুণে শ্রেষ্ঠ।
এ কারণেই বেদে বৈদিক শিক্ষা সমাপনান্তে বৈদিক সমাবর্তন ভাষণে বলা আছে-
মাতৃদেবো ভব। পিতৃদেবো ভব।
ইউরোপীয় মে মাসে খ্রিস্টীয় পবিত্র দ্বিতীয় রবিবারে মা দিবস পালন না করে আমাদের উচিৎ হবে মা সারদাদেবী অথবা তাঁর মত মাতৃরূপা কোন এদেশীয় ভারতবর্ষীয় মহামানবীর জন্মদিনকে মা দিবস বলে পালন করা। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা শুধু মাত্র একদিনের বিষয় নয়; প্রতিদিনের প্রতিক্ষণের বিষয়।
বহু তর্ক-বিতর্কের মধ্যেও ঘটা করে মা দিবস পালিত হচ্ছে। চলুন জেনে নিই আজকের প্রথম আলোতে প্রকাশিত সায়ফুল সামিনের লেখা মা দিবসের ইতিবৃত্ত নিয়ে একটি লেখা 'মা দিবস এলো যেভাবে' নামক লেখাটি-
" আধুনিক মা দিবসের প্রচলন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দিবসটির প্রবক্তা আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস। তাঁর মা অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ছিলেন একজন শান্তিবাদী সমাজকর্মী। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯০৫ সালে অ্যান মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন। সব মাকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি দিবস প্রচলনের লক্ষ্যে সচেষ্ট হন তিনি।
১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তাঁর মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। তবে তাতে দমে যাননি আনা। তিনি তাঁর চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে থাকে।
অবশেষে আনার প্রচেষ্টা সফল হয়। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটি সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।
ক্রমেই দিবসটি ঘিরে বাণিজ্য শুরু হয়। এতে দিবসটির মূল চেতনা লঙ্ঘিত হয়। মর্মাহত হন আনা। দিবসটির বাণিজ্যিকীকরণের তীব্র বিরোধিতা করেন তিনি। "
ইউরোপ- আমেরিকায় অনেকেই আছে যারা সারাবছর মায়ের কোন খোঁজখবর নেয় না বা নিতে সময় পায় না। তারাই বছরে একদিন এই মা দিবসে কেক, মিস্টি এবং বিভিন্ন রকমের গিফট নিয়ে মায়ের সাথে সময় কাটায়। তাই তাদের জন্যে এই দিনটি পালনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে ইউরোপ -আমেরিকাবাসীদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ, ওই একই কারণে ভারতবর্ষের জন্যে এ দিনটি গুরুত্বহীন। আমরা ৩৬৫ দিনই মায়ের কোলে উঠে মায়ের ভালবাসায় আচ্ছন্ন থাকতে চাই। সাধক কবি রামপ্রসাদ সেনের ভাষায় বলতে হয়-
যে দেখেছে মায়ের দোল, সে পেয়েছে মায়ের কোল,
রামপ্রসাদের এই বোল, ঢোল মারা বাণী।
( মা শব্দটা উচ্চারণের সাথে সাথে আমার মায়ের সাথে সাথে যাঁর কথা সর্বপ্রথম আমার মনে প্রতিভাসিত হয়; তিনি হলেন মা সারদাদেবী।)
লেখকঃ
শ্রী  কুশল বরন চক্রবর্তী 
সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । 
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ,বাংলাদেশ ।