Tuesday, July 18, 2017

ঢাকেশ্বরী মন্দির

ঢাকেশ্বরী মন্দির

আমরা প্রায় সকলেই কম বেশি জানি বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির হল শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী মন্দির। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত। মন্দিরে রয়েছে অষ্ট ধাতুর তৈরি দশভূজা অসুরদলনী মা দুর্গার বিগ্রহ। এক চালার এই বিগ্রহে মায়ের সঙ্গে রয়েছে লক্ষী,সরস্বতী,কার্তিক এবং সিদ্ধিদাতা গনেশের শ্রীবিগ্রহ। চালচিত্রের উপরে রয়েছে ধ্যানমগ্ন দেবাদিদেব।মন্দির আরও আছে মহাদেব এবং বাসুদেবের শ্রী মূর্তি। মন্দিরের পাশে রয়েছে পুকুর ও সারিবদ্ধ চারটে মনোরম শিব মন্দির।
মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে রয়েছে নানা মুণির বিভিন্ন মত। তবে মায়ের নাম হল ঢাকেশ্বরী যার অর্থ ঢাকার ঈশ্বরী বা রক্ষাকর্তী।অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন ঢাকেশ্বরী নাম থেকেই ঢাকা নামটি এসেছে। এই মন্দির অনেক প্রাচীন।তবে মন্দির প্রতিষ্ঠায় দুজন ব্যক্তির কথা পাওয়া যায়। বল্লাল সেন ও মোঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহ।মানসিংহ এখানে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এ জনশ্রুতি আছে। তবে অধিকাংশ গবেষক সেন বংশের প্রবল পরাক্রমশালী রাজা বল্লাল সেন কে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে মত দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বলা হয়। কোন করনে মন্দিরের কাছে উপবনে বল্লাল সেনের মা কে বনবাস দেয়া অন্তসত্ত্বা অবস্থায় । তিনি বনে ঢাকেশ্বরী মায়ের আরাধনা করেন সেখানে বল্লাল সেনের জন্ম হয়। বনে জন্ম তাই বনলাল বা বল্লাল নাম রাখেন তার মা।

বা আরেক মতে মাতে কৃপায় রানী পুত্র সন্তান লাভ করেন। যাই হোক পরে বল্লাল সেন রাজা হলে মন্দির নির্মান করেন এবং জনবসতি স্থাপনের ব্যাবস্থা করেন।
যতীন্দ্রমোহন রায় তার ঢাকা জেলার ইতিহাস গ্রন্থে বলেছেন ভবিষ্য ব্রহ্মখন্ডে বলা হয়েছে
বৃদ্ধ গঙ্গাতটে বেদ বর্ষ সাহস্র ব্যত্যয়ে
স্থাপিতব্যঞ্চ যবনৈ জাঙ্গিরং পতনং মহৎ।
তত্র দেবী মহাকালী ঢক্কা বাদ্যপ্রিয়া সদাঃ
গাস্যন্তি পত্তনং ঢক্কা সজ্ঞকং দেশবাসিনঃ।
প্রবাদ আছে সতী দেহ ছিন্ন হবার পর এই স্থানে তার কিরীটের ডাক এই জায়গায় পড়ে তাই এটা উপপীঠ।ডাক হল উজ্জ্বল গহনার অংশ। এটি দেশজ শব্দ স্থানীয় কর্মকারগণের নিকট পরিচিত।ডাক থেকেই ঢাকেশ্বরী নামের উৎপত্তি।
এই মন্দির বিভিন্ন সময় সংস্কার হয়েছে। বর্তমানেও হচ্ছে। ১৮৮৬ সালে ভাওয়ালের রাজা রাজেন্দ্রনারায়ণ রায়ের তিন পুত্র কুমার রণেন্দ্রনারায়ন রায় , কুমার রমেন্দ্রনারায়ণ রায় এবং কুমার রবীন্দ্রনরায়ণ রায় একটি দলিল করে দেন প্রতাপচন্দ্র চক্রবত্তী নামে একজন ব্রাহ্মন কে। প্রায় ১২৮ বছর আগের দলিলে মায়ের সম্পত্তি সহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ আছে।আরও উল্লেখ আছে প্রতাপচন্দ্রের বংশধরেরাই এই মন্দিরের সেবাইত হবে। তবে তারা এটা কখনো হস্তান্তর করতে পারবে না।এই দলিল অনুসারে প্রতপচন্দ্রের বংশধররা এখনও এখানকার সেবাইত। সেই দলিল আজও তাদের কাছে আছে।২০ বিঘা সম্পত্তি দেবত্তর করা ছিল কিন্ত বিভিন্ন সময় সেসব দখল হয়ে যায়। বর্তমানে ৭ বিঘায় মন্দির অবস্থিত।মন্দিরের সামনে রয়েছে মহানগর পুজা উদযাপন পরিষদের মন্দির।
যাই হোক এই মন্দির আমাদের জাতীয় মন্দির। বাংলাদেশে হিন্দুদের জন্যে এটি একটি গর্ব। প্রতিদিন এখানে দেশ বিদেশের অসংখ্য ভক্ত ও দর্শনার্থী আসেন মাকে দর্শন ও ভক্তির জন্যে।

তথ্যসূত্রঃ
১/ঢাকার ইতিহাস ১ম খন্ড
শ্রী যতীন্দ্রমোহন রায়
২/শারদীয়া বর্তমান ১৪২১
বাংলাদেশে জাগ্রত হিন্দু মন্দির,সুমন গুপ্ত